কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে আয়তন বৃদ্ধি পায় কেন
- আপডেট সময় : ০৯:২৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩ বার পড়া হয়েছে
আমরা জানি যে কোন কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে সেটির আয়তন বৃদ্ধি পায় বা প্রসারিত হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে তাপ প্রয়োগের কারণে পদার্থের কণা গুলোর মধ্যে যে বন্ধন শক্তি রয়েছে সেটি আস্তে আস্তে ভেঙে যায়। বন্ধন শক্তি বাড়ার ফলে অণু গুলো ছোটাছুটি শুরু করে। আর যার কারণে অনু গুলোর দূরত্ব বৃদ্ধি পায় এবং পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পায়।
আবার যদি সেই একই পদার্থকে ঠান্ডা করা হয় তাহলে অণু গুলোর মধ্যে বন্ধন শক্তি দৃঢ় হয় এবং আয়তন কমে যায়।
আমরা জানি প্রতিটি পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুকরণ ও সমন্বয়ে গঠিত। এই অণু পরমাণু মধ্য বিভিন্ন ধরনের বন্ধন বিদ্যালয়। তার মধ্যে রয়েছে আয়নিক বন্ধন, সমযোজী বন্ধন ইত্যাদি। পদার্থের অনু গুলো একে অপরের সাথে যত দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে অর্থাৎ বন্ধন যত শক্তিশালী হয় সেই বস্তুটিও তত কঠিন হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় লোহার মধ্যে অণু গুলো একে অপরের সাথে খুবই কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ।
আর এই শক্তিশালী বন্ধন গুলো ভাঙতে অনেক বেশি শক্তি অর্থাৎ তাপের প্রয়োজন। যার কারণে লোহার গলনাঙ্ক কিংবা স্ফুটনাঙ্ক অনেক বেশি।
কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে আয়তন বৃদ্ধি পায় কেন
আবার সীসার মধ্যে অণু গুলোর বন্ধন শক্তি অনেকটাই কম তাই এটিই ভাঙতে খুব বেশি তাপের প্রয়োজন হয় না। ঠিক একইভাবে মোমের গলনাঙ্ক অনেক কম। পদার্থের কণা গুলোর মধ্যকার বন্ধন শক্তি দুর্বল।
তখন কোন কঠিন বস্তুতে তাপ প্রয়োগ করা হয় তখন আস্তে আস্তে এই বন্ধন শক্তি গুলো ভেঙে যায় এবং অণু গুলোর মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। আর এই দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ফলাফলস্বরূপ আয়তন বৃদ্ধি পায় কিংবা কঠিন পদার্থের প্রসারণ ঘটে।
আমরা ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছি গরুর গাড়ি কাঠের চাকার চারপাশে লোহার রিং পরানোর জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে। যখন লোহার রিং কে তাপ প্রয়োগ করা হয় তখন সেটির আয়তন বৃদ্ধি পায়। তারপর সেই গরম অবস্থায় কাঠের চাকা চারপাশে যুক্ত করার পর এটাকে পুনরায় ঠান্ডা করা হয়। ঠান্ডা করলে এটির আয়তন কমে যায় এবং এটি খুবই দৃঢ়ভাবে কাঠের চাকা ডেকে ধরে রাখে।
ঠিক তেমনিভাবে তোমরা খেয়াল করে দেখবে শীতের সময় বড় বড় বিদ্যুতের খুঁটির সাথে যে লাইনটা না হয় সেগুলি একদম সোজা হয়ে রয়েছে। কিন্তু গরমকালে রোদের সময় দেখবে সেই একই বিদ্যুতের লাইন গুলোর নিচের দিকে কিছুটা বেঁকে গেছে। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও তার প্রয়োগ ও কঠিন পদার্থের প্রসারনের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে।
কারণ গরমকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে এবং বিদ্যুতের তার গুলি কিছুটা প্রসারিত হয় বা আয়তন বৃদ্ধি পায়। যার কারণে নিচের দিকে কিছুটা হেলে পড়ে। আবার শীতকালে যখন তাপমাত্রার হ্রাস পায় তখন সেই পদার্থের আয়তন আবার সংকুচিত হয়ে যায়। যার কারণে একদম সোজা হয়ে থাকে।
বরফকে তারপর করলে আয়তন কমে কেন
যদি বরফকে তাপ প্রয়োগ করা হয় তাহলে সেটি পানিতে পরিণত হয় এবং তার আয়তন বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমতে থাকে। এর পেছনে অবশ্য একটি গান রয়েছে। পানি কে যদি কম তাপমাত্রায় রাখা হয় তাহলে সেটি আস্তে আস্তে সংকুচিত হতে থাকে। পানি সবচাইতে বেশি সংকুচিত হয় চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায়।
আর পানি আর বরফ কিন্তু দুইটি আলাদা বস্তু নয়। বরং পানির আরও একটি রূপ হচ্ছে বড়। যখন চারদিকে সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে পানি আস্তে আস্তে বরফে পরিণত হতে থাকে তখন এর অণু গুলোর বন্ধন শক্তি আরও জটিল হয়ে যায়। যার কারণে এটি ক্রিস্টালের আকার ধারণ করে এবং আয়তন বেড়ে যায়। ঠিক একই ভাবে বরফ কেতাব প্রয়োগ করলে চারদিকে সেলসিয়াস পর্যন্ত আয়তন কমতে থাকে আবার চাই ডিগ্রি সেলসিয়াসের পরে সার্বিক নিয়মে আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মূলত বন্ধন শক্তির এই কারণেই কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে আয়তন বৃদ্ধি পায় বা প্রসারণ করে।