অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে কি কি শারীরিক ক্ষতি হতে পারে
- আপডেট সময় : ০৪:৫০:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ করে এখনকার তরুণ তরুণীরা রাতের বেলা বেশি সময় জেগে থাকার অভ্যাস হয়েছে। আবার অফিসের কাজ এবং নানা ধরনের ব্যস্ততার কারণে অনেকেই অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মোবাইল, ফেসবুক, টিক টক, গেমস ইত্যাদির কারণেও আমরা দেরিতে ঘুমিয়ে থাকি।
তবে কারণ যাইহোক এবং আপনার বয়স যাই হোক না কেন। শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের পাশাপাশি মানুষের মস্তিষ্কের জন্য এটি খুবই ক্ষতিকর। এমনকি অধিকাংশ মানুষের রাত জাগার কুফল সম্পর্কে ধারণা রাখে না। মনে করে রাতের বেলা কাজ করে দিনের বেলা ঘুমিয়ে নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
চলুন আমেরিকার ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে রাত জাগার কুফল কিংবা ক্ষতিকর দিক গুলি সম্পর্কে জেনে নেই।
মেটাবলিক ডিস অর্ডার
এটি এমন এক ধরনের ব্যাধি যার কারণে আমাদের দেহের প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটের মত নানা উপাদান গুলি নেতিবাচক ভাবে পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনের ফলসরুপ আমাদের দেহে অলসতা, ওজন কমে যাওয়া, জন্ডিস এবং অন্যান্য খিচুনির মত সমস্যার উদ্ভব হয়।
রাত জাগার কারণে ঘুমের সমস্যা
আমাদের দেহের মাঝেও একটি ঘড়ি রয়েছে যেটাকে বলা হয় সার্কাডিয়ান সাইকেল। অর্থাৎ মস্তিষ্ক নির্ধারণ করে আপনার কখন ঘুমের প্রয়োজন এবং কখনো আপনি জেগে থাকতে পারবেন।
এপ্রক্রিয়ার মধ্য আবার হরমোন, হজম ইত্যাদি অংশও জড়িত। বিখ্যাত হার্বাড মেডিকেল স্কুলের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দাবি করেছেন যদি মানুষ অতিরিক্ত পরিমাণে রাত জাগতে থাকে তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ সাইকেলটি সমস্যা দেখা দেয়।
যার কারণে ঘুম না হওয়ার মত সমস্যা বাড়ে। এমনকি যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন তখন অস্বস্তি অনুভব হওয়া দেখা যায়। এ রোগ যদি গুরু তোরে পর্যায়ে চলে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা না হলে মানসিক অসুস্থতা থেকে কাজে বিরক্তি লাগা, অবসাদ ইত্যাদি দেখা যেতে পারে।
আপনারা নিশ্চয়ই একটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন রাতের বেলা ঠিকমতো ঘুম না হলে সকাল বেলা উঠতে যেমন আলসেমি লাগে ঠিক তেমনি ভাবে সারাদিনে কাজেও মনোযোগ দেওয়া যায় না। এর কারণে কমে যেতে পারে আস্ত বিশ্বাস যা আপনার প্রফেশনাল এবং ব্যক্তিগত জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিপাক ক্রিয়ায় সমস্যা
এটা শুনে অনেকটা অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হলেও রাত জাগার কুফল গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেওয়া। আর পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা মানে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যাথা, আমাশয়, ডায়রিয়া ইত্যাদি।
হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীর বিভিন্ন রোগ
মানুষের দেহকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন পরিমিত পরিমাণে ঘুম তাও আবার রাতে নির্দিষ্ট সময়। কিন্তু আপনি যদি রাতের বেলা মোবাইল, টিকটক ইত্যাদি দেখে পার করেন তাহলে দেখা দিতে পারে হৃদপিণ্ড এবং রক্ত নালিরও সমস্যা।
কারণ যে সময় আপনার ঘুমের প্রয়োজন সেই সময় আপনি জেগে আছেন। এর জন্য আপনার মস্তিষ্ক এবং দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম পাচ্ছে না। এতে করে হৃদপিন্ডে অক্সিজেন পৌঁছাতে বাধা, বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, পেরিফেরিয়াল আর্টারি ডিজিজ, কার্ডিয়াক অ্যারেস্প ইত্যাদি হতে পারে।
ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা দেখা গিয়েছে যে সকল নারী এবং পুরুষ বিগত পাঁচ বছর ধরে অকারণে রাত জাগছেন তাদের মধ্য হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেক বেশি।
সবশেষে রাত জাগার কুফল কিংবা রাত জাগার ক্ষতিকর দিকের শেষ নেই। আপনি কি জানেন এর ফলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই ধরনের অভ্যাস থাকলে আজও পরিত্যাগ করুন। যত কাজ আছে সেগুলো চেষ্টা করুন সন্ধ্যাবেলা কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে শেষ করার। কারণ আপনি যতই দিনের বেলা ঘুমান না কেন রাতের বিশ্রামের অভাব আপনি কখনোই দিনের বেলা পূরণ করতে পারবেন না।