বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা গুলি কি কি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩৭ বার পড়া হয়েছে

বেসরকারি চাকরির সুবিধা

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের পরিবারে একজনের উপর অন্যান্য সদস্য গুলো পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য মতে দেশের মোট কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৬৫.৫১%। কিন্তু এদের একটি বিরাট অংশ পুরোপুরি ভাবে বেকার অবস্থায় রয়েছে। আর সরকারি চাকরির লোকবল যেহেতু খুবই সীমিত পরিমাণে নিয়োগ প্রদান করা হয় তাই বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কেও এখনকার আগ্রহ হয়ে উঠছে।

কারণ বিশাল এই বেকারত্ব দূর করার জন্য শুধুমাত্র সরকারি কর্মসংস্থান গুলোর উপর নির্ভরশীল হলেই হবে না। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি চাকরি, এনজিও চাকরি, বিদেশে জনশক্তির রপ্তানি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সরকার বেশ ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটির থেকে এত এত শিক্ষার্থী পাস করে বের হচ্ছে এদের সবাইকে সরকারি চাকরি দেওয়া একদমই সম্ভব নয়। আবার বেকারের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেকটাই বেশি।

সবকিছু বিবেচনা করলে কর্মসংস্থানের বাজারে বেসরকারি খাত গুলো সবচাইতে বড় ভূমিকা রাখছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পেই সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখেরও মানুষ কাজ করছে।

বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের অবস্থা

বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা জানার আগে চলুন কর্মসংস্থান সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ কর্মহীন থাকার পিছনেও বেশকিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকা।

এমনকি বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সুবিধা থাকলেও সেটি অপ্রতুল।

কিন্তু চাকরির বাজারে তো শুধুই দরকার দক্ষ শ্রমিকের এবং কাজ জানা লোকের। অনেক কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্টুডেন্টরা শুধুমাত্র ডিগ্রী নিয়ে বের হয়। যখন তারা কাজে যোগদান করে তখন অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। যার কারণে অল্প বয়সে এরা আবার হতাশ হয়ে পড়ে এবং বিকল্প আয়ের উৎসুক খুঁজতে থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন কাজে দক্ষ না হলে কোন আয়ের উৎসই যে তার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না সেটা বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাইতো সিদ্ধান্তহীনতায় বুকে অনেক তরুন তরুণীরা।

তবে আশার বিষয় হচ্ছে বর্তমানে প্রাইভেট পাবলিক সরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্টরা গ্রাজুয়েশন কিংবা লেখাপড়া শেষ করে আর দেরি না করে যার যার পছন্দ মতো কর্মক্ষেত্রে ঢুকে পড়ছে। যার মধ্য সরকারি চাকরি ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, এনজিও প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এমনকি ক্যারিয়ার শুরু করতে দেরি না করে যার যার পছন্দের দেশেও পাড়ি জমা হচ্ছে।

বেসরকারি চাকরির সুবিধা

উচ্চ বেতন

প্রাইভেট জবের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে উচ্চ বেতনে চাকরি করা যায়। আপনি যত বেশি দক্ষ এবং কাজে নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে পারবেন আপনি তত দ্রুত হবে সেটাকে বেতন পেতে পারবেন। এমনকি এর কোন লিমিটেশনও নেই। ভালো ভালো প্রাইভেট কোম্পানিতে মোটামুটি ৮ থেকে ১০ বছরের ক্যারিয়ারে অনেকেই ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছে। যেটি সরকারি চাকরিতে মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার।

প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন

বেসরকারি চাকরির সুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিজের ইচ্ছামত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করা। আপনি ইতিমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন যেখানে কোন কারনে আপনার আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। আপনার যদি যথেষ্ট দক্ষতা এবং যোগ্যতা থেকে খুব সহজেই অন্য সেক্টরে বা অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে পারবেন।

দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করা

বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ইন্টারন্যাশনাল ভাবে কাজ করে থাকে। ধরুন আপনি যেকোনো একটি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজিং, এইচআর, এডমিন ইত্যাদি সেকশনে জব করেন। দক্ষতা এবং ভালো ইংরেজি জানা সাপেক্ষে আপনি খুব সহজেই পৃথিবীর যেকোনো দেশেই একই সেক্টরে যোগদান করতে পারবেন।

যখন খুশি চাকরি ত্যাগ করা

যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তিপত্র হতে হয় তবুও বেসরকারি চাকরির সুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যখন খুশি আপনি চাকরি ছাড়তে পারবেন। তবে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাকরি ছাড়ার খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তবুও যাদের বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি হয়ে যায় তারা চাইলে যখন তখন এখান থেকে অব্যাহতি নিতে পারে।

আয়ের বিকল্প উৎস তৈরি করা

এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের ম্যানুফ্যাকচারিং, পোশাক শিল্প, এনজিও ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সেখানকার কাজ গুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করেছে। অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে পরিচালনা করতে হয় কিংবা তার একটি নির্দিষ্ট পণ্য উৎপাদনে দক্ষ হয়ে গিয়েছে। এ ধরনের চাকরি থেকে অনেক লোকই নিজেদের আয়ের বিকল্প উৎস অর্থাৎ নানা ধরনের বিজনেস প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এজন্য প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছা এবং ধৈর্য পরিশ্রম।

স্মার্ট লাইফ

যারা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তারা সাধারণত অনেক বেশি স্মার্ট লাইফ বা জীবনযাপন পার করে। কারণ ব্যাংকিং আর্থিক কিংবা যে ধরনের প্রতিষ্ঠানে বলুন না কেন কর্মকর্তাদের অবশ্যই খুবই স্মার্ট পোশাক স্মার্ট ব্যবহার এবং স্মার্ট আচরণ থাকতে হয়। যার কারণে জীবনযাত্রাও বেশ পরিবর্তন হয়ে যায়।

নিজেকে প্রমাণের সুযোগ

আপনি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির সময় নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। যেকোনো ধরনের কাজে নিজের আত্মবিশ্বাস, জ্ঞান, বুদ্ধি ইত্যাদি বিনিয়োগ করে কোম্পানির পাশাপাশি নিজেরা উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।

আরো কিছু বেসরকারি চাকরির সুবিধা

• সাধারণত প্রাইভেট কোম্পানি গুলোর ম্যানেজার কিংবা তার থেকে সিনিয়র পদ গুলোর কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

• বিভিন্ন ধরনের এনজিও এবং প্রাইভেট কোম্পানির মধ্যে সরকারি চাকরির মতো গ্র্যাচুইটি সুবিধা, এককালীন টাকা, চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে।

• বেসরকারি চাকরির সুবিধা গুলোর মধ্যে আরেকটি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যায়।

বেসরকারি চাকরির অসুবিধা গুলি কি কি

এতক্ষণ তো অসুবিধা গুলো জানলাম এবার চলুন বেশ কিছু অসুবিধা সম্পর্কে জানা নেই।

চাকুরীর কোন নিশ্চয়তা নেই

আপনি যদি এই প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করেন তাহলে সেটা যেমন যখন খুশি তখন ছাড়তে পারবেন ঠিক তেমনি ভাবে প্রতিষ্ঠান যখন খুশি আপনাকে অব্যাহত দিতে পারবে। কাজে কোন ভুল কিংবা গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে খুব সহজে চলে যেতে পারে আপনার চাকরি

অনেক বেশি পরিশ্রম

যেহেতু প্রাইভেট জব গুলোতে বেতনের পরিমাণও বেশি তাই পরিশ্রমও অনেক বেশি করতে হয়। এটাই বেসরকারি চাকরি অসুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম। মোটামুটি সকাল ৮ টা থেকে নিয়ে রাত ৮ টা কিংবা ৭টা সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ডিউটিতে থাকে। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে ডিউটির পরিমাণ আরো বেশি। মাঝে মাঝে রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ডিউটি করে এদের নিত্য না ভিত্তিক ব্যাপার।

চ্যালেঞ্জিং চাকরি জীবন

আপনি খেয়াল করে দেখবেন আমাদের দেশের বড় বড় কোম্পানি গুলোতে ঊর্ধ্বতন পদ গুলোতে অনেক বিদেশী লোক চাকরি করে। এদের সাথে প্রতিযোগিতা করে প্রমোশন নেওয়ার কিংবা উচ্চ পদে যোগদান করা খুবই চ্যালেঞ্জিং।

অফিস পলিটিক্স বা কর্ম পরিবেশ

প্রায় সকল প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে অফিস পলিটিক্স একটি সাধারণ ব্যাপার। অনেকেই আবার এই বিষয় গুলোর সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করতে পারে না। সরকারি চাকরি অসুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম।

পেনশন সুবিধা

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি গুলোতে শেষ বয়সে পেনশনের সুবিধা নেই। এমনিতেও তো চাকুরী নিশ্চয়তা থাকেনা। তবে বর্তমানে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসহ এনজিও এবং নানা ধরনের কোম্পানি গুলোতে এককালীন টাকা বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা চালু করা হচ্ছে।

অন্যান্য কিছু অসুবিধা

• যথাসময়ে অফিসে প্রবেশ করতে হয় এবং অফিস থেকে বের হওয়ার নির্ধারিত কোন সময় নেই।

• ছুটির সুবিধা অনেকটাই কম।

• অনেক সময় ভালো পারফরম্যান্স এবং যথাসাধ্য দক্ষতার থাকা সত্ত্বেও অফিস পলিটিক্সের কারণে চাকুরী হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

• সেলস, মার্কেটিং ইত্যাদি কাজ গুলো ফিল্ডে করতে হয় বিধায় ঝড়-বৃষ্টির অপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করা অনেক কঠিন বিষয়।

উপরে উল্লেখিত বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা গুলি ছাড়াও আরো অনেক বিষয় দিয়ে রয়েছে। তবে চাকুরী যে ধরনের হোক না কেন সবার আগে দেখা প্রয়োজন সেখান থেকে হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন করা যাবে কিনা। কারণ সরকারি চাকরিতে যোগদানের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। বর্তমানে সেটি ৩২ বছর। অর্থাৎ ৩২ বছর পার হয়ে গেলে আপনি আর সরকারি চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন না তখন বেসরকারি চাকরি অথবা বিজনেস বিকল্প উপায় থাকে। তাই সুবিধা অসুবিধা গুলি দূরে রেখে আপনার যে ধরনের কর্মক্ষেত্র গুলো পছন্দ হয় সেটাতে যোগদান করা উচিত। কারণ কাজকে ভালোবাসতে আপনার জীবনে অনেক সহজ হয়ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

OPXNews Stuff

OPX NEWS Stuff

বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা গুলি কি কি

আপডেট সময় : ১০:৫৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের পরিবারে একজনের উপর অন্যান্য সদস্য গুলো পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য মতে দেশের মোট কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৬৫.৫১%। কিন্তু এদের একটি বিরাট অংশ পুরোপুরি ভাবে বেকার অবস্থায় রয়েছে। আর সরকারি চাকরির লোকবল যেহেতু খুবই সীমিত পরিমাণে নিয়োগ প্রদান করা হয় তাই বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কেও এখনকার আগ্রহ হয়ে উঠছে।

কারণ বিশাল এই বেকারত্ব দূর করার জন্য শুধুমাত্র সরকারি কর্মসংস্থান গুলোর উপর নির্ভরশীল হলেই হবে না। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি চাকরি, এনজিও চাকরি, বিদেশে জনশক্তির রপ্তানি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সরকার বেশ ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটির থেকে এত এত শিক্ষার্থী পাস করে বের হচ্ছে এদের সবাইকে সরকারি চাকরি দেওয়া একদমই সম্ভব নয়। আবার বেকারের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেকটাই বেশি।

সবকিছু বিবেচনা করলে কর্মসংস্থানের বাজারে বেসরকারি খাত গুলো সবচাইতে বড় ভূমিকা রাখছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পেই সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখেরও মানুষ কাজ করছে।

বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের অবস্থা

বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা জানার আগে চলুন কর্মসংস্থান সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ কর্মহীন থাকার পিছনেও বেশকিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকা।

এমনকি বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সুবিধা থাকলেও সেটি অপ্রতুল।

কিন্তু চাকরির বাজারে তো শুধুই দরকার দক্ষ শ্রমিকের এবং কাজ জানা লোকের। অনেক কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্টুডেন্টরা শুধুমাত্র ডিগ্রী নিয়ে বের হয়। যখন তারা কাজে যোগদান করে তখন অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। যার কারণে অল্প বয়সে এরা আবার হতাশ হয়ে পড়ে এবং বিকল্প আয়ের উৎসুক খুঁজতে থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন কাজে দক্ষ না হলে কোন আয়ের উৎসই যে তার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না সেটা বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাইতো সিদ্ধান্তহীনতায় বুকে অনেক তরুন তরুণীরা।

তবে আশার বিষয় হচ্ছে বর্তমানে প্রাইভেট পাবলিক সরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্টরা গ্রাজুয়েশন কিংবা লেখাপড়া শেষ করে আর দেরি না করে যার যার পছন্দ মতো কর্মক্ষেত্রে ঢুকে পড়ছে। যার মধ্য সরকারি চাকরি ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, এনজিও প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এমনকি ক্যারিয়ার শুরু করতে দেরি না করে যার যার পছন্দের দেশেও পাড়ি জমা হচ্ছে।

বেসরকারি চাকরির সুবিধা

উচ্চ বেতন

প্রাইভেট জবের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে উচ্চ বেতনে চাকরি করা যায়। আপনি যত বেশি দক্ষ এবং কাজে নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে পারবেন আপনি তত দ্রুত হবে সেটাকে বেতন পেতে পারবেন। এমনকি এর কোন লিমিটেশনও নেই। ভালো ভালো প্রাইভেট কোম্পানিতে মোটামুটি ৮ থেকে ১০ বছরের ক্যারিয়ারে অনেকেই ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছে। যেটি সরকারি চাকরিতে মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার।

প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন

বেসরকারি চাকরির সুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিজের ইচ্ছামত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করা। আপনি ইতিমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন যেখানে কোন কারনে আপনার আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। আপনার যদি যথেষ্ট দক্ষতা এবং যোগ্যতা থেকে খুব সহজেই অন্য সেক্টরে বা অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে পারবেন।

দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করা

বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ইন্টারন্যাশনাল ভাবে কাজ করে থাকে। ধরুন আপনি যেকোনো একটি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজিং, এইচআর, এডমিন ইত্যাদি সেকশনে জব করেন। দক্ষতা এবং ভালো ইংরেজি জানা সাপেক্ষে আপনি খুব সহজেই পৃথিবীর যেকোনো দেশেই একই সেক্টরে যোগদান করতে পারবেন।

যখন খুশি চাকরি ত্যাগ করা

যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তিপত্র হতে হয় তবুও বেসরকারি চাকরির সুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যখন খুশি আপনি চাকরি ছাড়তে পারবেন। তবে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাকরি ছাড়ার খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তবুও যাদের বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি হয়ে যায় তারা চাইলে যখন তখন এখান থেকে অব্যাহতি নিতে পারে।

আয়ের বিকল্প উৎস তৈরি করা

এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের ম্যানুফ্যাকচারিং, পোশাক শিল্প, এনজিও ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সেখানকার কাজ গুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করেছে। অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে পরিচালনা করতে হয় কিংবা তার একটি নির্দিষ্ট পণ্য উৎপাদনে দক্ষ হয়ে গিয়েছে। এ ধরনের চাকরি থেকে অনেক লোকই নিজেদের আয়ের বিকল্প উৎস অর্থাৎ নানা ধরনের বিজনেস প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এজন্য প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছা এবং ধৈর্য পরিশ্রম।

স্মার্ট লাইফ

যারা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তারা সাধারণত অনেক বেশি স্মার্ট লাইফ বা জীবনযাপন পার করে। কারণ ব্যাংকিং আর্থিক কিংবা যে ধরনের প্রতিষ্ঠানে বলুন না কেন কর্মকর্তাদের অবশ্যই খুবই স্মার্ট পোশাক স্মার্ট ব্যবহার এবং স্মার্ট আচরণ থাকতে হয়। যার কারণে জীবনযাত্রাও বেশ পরিবর্তন হয়ে যায়।

নিজেকে প্রমাণের সুযোগ

আপনি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির সময় নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। যেকোনো ধরনের কাজে নিজের আত্মবিশ্বাস, জ্ঞান, বুদ্ধি ইত্যাদি বিনিয়োগ করে কোম্পানির পাশাপাশি নিজেরা উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।

আরো কিছু বেসরকারি চাকরির সুবিধা

• সাধারণত প্রাইভেট কোম্পানি গুলোর ম্যানেজার কিংবা তার থেকে সিনিয়র পদ গুলোর কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

• বিভিন্ন ধরনের এনজিও এবং প্রাইভেট কোম্পানির মধ্যে সরকারি চাকরির মতো গ্র্যাচুইটি সুবিধা, এককালীন টাকা, চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে।

• বেসরকারি চাকরির সুবিধা গুলোর মধ্যে আরেকটি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যায়।

বেসরকারি চাকরির অসুবিধা গুলি কি কি

এতক্ষণ তো অসুবিধা গুলো জানলাম এবার চলুন বেশ কিছু অসুবিধা সম্পর্কে জানা নেই।

চাকুরীর কোন নিশ্চয়তা নেই

আপনি যদি এই প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করেন তাহলে সেটা যেমন যখন খুশি তখন ছাড়তে পারবেন ঠিক তেমনি ভাবে প্রতিষ্ঠান যখন খুশি আপনাকে অব্যাহত দিতে পারবে। কাজে কোন ভুল কিংবা গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে খুব সহজে চলে যেতে পারে আপনার চাকরি

অনেক বেশি পরিশ্রম

যেহেতু প্রাইভেট জব গুলোতে বেতনের পরিমাণও বেশি তাই পরিশ্রমও অনেক বেশি করতে হয়। এটাই বেসরকারি চাকরি অসুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম। মোটামুটি সকাল ৮ টা থেকে নিয়ে রাত ৮ টা কিংবা ৭টা সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ডিউটিতে থাকে। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে ডিউটির পরিমাণ আরো বেশি। মাঝে মাঝে রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ডিউটি করে এদের নিত্য না ভিত্তিক ব্যাপার।

চ্যালেঞ্জিং চাকরি জীবন

আপনি খেয়াল করে দেখবেন আমাদের দেশের বড় বড় কোম্পানি গুলোতে ঊর্ধ্বতন পদ গুলোতে অনেক বিদেশী লোক চাকরি করে। এদের সাথে প্রতিযোগিতা করে প্রমোশন নেওয়ার কিংবা উচ্চ পদে যোগদান করা খুবই চ্যালেঞ্জিং।

অফিস পলিটিক্স বা কর্ম পরিবেশ

প্রায় সকল প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে অফিস পলিটিক্স একটি সাধারণ ব্যাপার। অনেকেই আবার এই বিষয় গুলোর সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করতে পারে না। সরকারি চাকরি অসুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম।

পেনশন সুবিধা

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি গুলোতে শেষ বয়সে পেনশনের সুবিধা নেই। এমনিতেও তো চাকুরী নিশ্চয়তা থাকেনা। তবে বর্তমানে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসহ এনজিও এবং নানা ধরনের কোম্পানি গুলোতে এককালীন টাকা বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা চালু করা হচ্ছে।

অন্যান্য কিছু অসুবিধা

• যথাসময়ে অফিসে প্রবেশ করতে হয় এবং অফিস থেকে বের হওয়ার নির্ধারিত কোন সময় নেই।

• ছুটির সুবিধা অনেকটাই কম।

• অনেক সময় ভালো পারফরম্যান্স এবং যথাসাধ্য দক্ষতার থাকা সত্ত্বেও অফিস পলিটিক্সের কারণে চাকুরী হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

• সেলস, মার্কেটিং ইত্যাদি কাজ গুলো ফিল্ডে করতে হয় বিধায় ঝড়-বৃষ্টির অপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করা অনেক কঠিন বিষয়।

উপরে উল্লেখিত বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা গুলি ছাড়াও আরো অনেক বিষয় দিয়ে রয়েছে। তবে চাকুরী যে ধরনের হোক না কেন সবার আগে দেখা প্রয়োজন সেখান থেকে হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন করা যাবে কিনা। কারণ সরকারি চাকরিতে যোগদানের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। বর্তমানে সেটি ৩২ বছর। অর্থাৎ ৩২ বছর পার হয়ে গেলে আপনি আর সরকারি চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন না তখন বেসরকারি চাকরি অথবা বিজনেস বিকল্প উপায় থাকে। তাই সুবিধা অসুবিধা গুলি দূরে রেখে আপনার যে ধরনের কর্মক্ষেত্র গুলো পছন্দ হয় সেটাতে যোগদান করা উচিত। কারণ কাজকে ভালোবাসতে আপনার জীবনে অনেক সহজ হয়ে যাবে।