ইসলামে সম্পদ সঞ্চয় করা কি জায়েজ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫১:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১ বার পড়া হয়েছে

ইসলামের সম্পদ সঞ্চয় করা কি জায়েজ

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যদি কোন মুসলমান ব্যক্তি তার অর্থ উপার্জন এবং ব্যয় করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত পালন করেন তাহলে সে আয় এবং ব্যায় এবাদত বলে গণ্য হয়। তবে অর্থ উপার্জন ও প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করার মাঝেও আরও একটি বিষয় রয়েছে। সেটি অর্থ সেভিংস করা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পদ সঞ্চয় করা কি জায়েজ আছে কিনা সেই বিষয়টি নিয়ে আজকে আমি আলোচনা করবো।

আমাদের জন্য অধিক অর্থ উপার্জনে নিরুৎসাহিত না করা হলেও অর্থ উপার্জনের জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয় নির্ধারিত করা হয়েছে। কারণ বান্দা যখন অর্থের ফাঁদে পা দিয়ে তার জীবনের প্রায় সব অংশই শেষ করে তখন সে পরকালের কথা ভুলে যায়। এমনকি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও কিংবা অপচয় করার ক্ষেত্রেও রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলার কঠোর বিধি নিষেধ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইসলামে অর্থ সঞ্চয় করা জায়েজ কি?

পবিত্র কোরআনে অর্থ ব্যয় এবং অপচয়ের ক্ষেত্রে একটি আয়াতে এরশাদ করা হয়েছে, তোমরা আহার করো পান করো, কিন্তু অপচয় করোনা: তিনি (মহান আল্লাহ তায়ালা) অপচয় কারীদের ভালবাসেন না। (এটি উল্লেখিত আছে সূরা আরাফের ৩২ নম্বর আয়াতে)।

অর্থাৎ অর্থ কিংবা সম্পদের অপচয় করা কিংবা কৃপণতা করা দুটোই ইসলামের দ্বারা অনুমোদিত নয়। এই দুইটির মাঝামাঝি অর্থাৎ মিতব্যয়ী হয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করার জন্য ইসলাম শিক্ষা দিয়ে থাকে। যে সকল ব্যক্তিগণ অপচয় এবং কৃপণতা না করে মিতব্যায়িতার সহিত অর্থ ব্যয় করে থাকে তাদেরকে মহান আল্লাহতালা নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এ ব্যাপারে সূরা ফুরকানের ৬৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, মহান রহমানের বান্দা তো তারাই যারা অপব্যায় করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এই দুইয়ের মধ্যবর্তী।

তবে কোন বান্দা যদি সঞ্চয় করে এই ভয়ে যে ভবিষ্যতে এটি তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে তাহলে সেটি নিষিদ্ধ। অর্থ সঞ্চয় কিংবা সম্পদ সঞ্চয় কারো ভবিষ্যৎ জীবনকে নিশ্চয়তা প্রদান করবে এই চিন্তা থেকে কখনোই সেভিংস করা যাবে না। মূল কথা হচ্ছে অর্থ আমাদেরকে কখনোই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে না। যে কোন ধরনের বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। তাই ভবিষ্যতের অনিশ্চিত কোন বিষয়ের জন্য বর্তমানে কোন বিষয় গুলি বাদ দেওয়া ঠিক নয়।

ইসলামে অর্থ উপার্জন ও সঞ্চয়ের মূলনীতি কি

পবিত্র ইসলাম ধর্মে কারো অর্থ উপার্জনের মধ্য সীমা প্রদান করেনি। অর্থাৎ হালাল পন্থায় আপনি যেকোনো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এখানে উল্লেখ যোগ্য বিষয় যে অর্থ উপার্জনের পেছনে এত বেশি সময় ব্যয় করা উচিত নয় যার কারণে আপনি মহান আল্লাহতালা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ থেকে দূরে সরে যান।

আবার সম্পদ ব্যয়েও অপচয় করা যাবে না। সম্পদ খরচ করতে হবে ইসলামের বিধান মত। যার মধ্যে রয়েছে দুনিয়াবী কোন অনুষ্ঠান, বাজে কাজ, বাজে নেশা ইত্যাদি কাজে অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

আবার অনেকেই বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান যেমন জন্মদিন, মুসলমানি ইত্যাদিতে অর্থ ব্যয়কে বেশি উদারতা মনে করে থাকেন। আবার আত্মীয়-স্বজনকে ধার প্রদান করা, উপহার প্রদান করা ইত্যাদির জন্য সঞ্চয় করে থাকেন। এমন চিন্তা থেকে অর্থ সেভিংস করা উচিত নয়।

অর্থ উপার্জনের পর সেখান থেকে প্রতিবেশীর হক, যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি আদায় করার পর আপনি কিছু টাকা অবশ্যই সেভিংস করতে পারেন। আবার চাইলে আপনি সেভিংস না করে মানুষকে ঋণ সহায়তা করতে পারেন কিংবা ব্যবসায় ইনভেস্ট করতে পারেন। এতে করে আপনারা যেভাবে অর্থ সঞ্চয় হয় ঠিক অপর ভাবে অন্যদেরও উপকার হয়।

এ ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পরিণত পরিমাণে ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না। (মুসনাদে আহমদ ৭৩০৩)

এ থেকে আমরা বুঝতে পারি ইসলামের সম্পদ সঞ্চয় করার জায়েজ কিন্তু সেটা কখনোই এমন কোন উদ্দেশ্য নয় যে সেটি আমাকে বিপদ হতে রক্ষা করবে। আর অর্থ উপার্জন এর ক্ষেত্রে অবশ্যই হালাল পন্থা অবলম্বন করতে হবে।। হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জন সঞ্চয় ব্যয় কোন কিছুই আপনার জন্য জায়েজ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

OPXNews Stuff

OPX NEWS Stuff

ইসলামে সম্পদ সঞ্চয় করা কি জায়েজ

আপডেট সময় : ১০:৫১:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

যদি কোন মুসলমান ব্যক্তি তার অর্থ উপার্জন এবং ব্যয় করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত পালন করেন তাহলে সে আয় এবং ব্যায় এবাদত বলে গণ্য হয়। তবে অর্থ উপার্জন ও প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করার মাঝেও আরও একটি বিষয় রয়েছে। সেটি অর্থ সেভিংস করা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পদ সঞ্চয় করা কি জায়েজ আছে কিনা সেই বিষয়টি নিয়ে আজকে আমি আলোচনা করবো।

আমাদের জন্য অধিক অর্থ উপার্জনে নিরুৎসাহিত না করা হলেও অর্থ উপার্জনের জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয় নির্ধারিত করা হয়েছে। কারণ বান্দা যখন অর্থের ফাঁদে পা দিয়ে তার জীবনের প্রায় সব অংশই শেষ করে তখন সে পরকালের কথা ভুলে যায়। এমনকি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও কিংবা অপচয় করার ক্ষেত্রেও রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলার কঠোর বিধি নিষেধ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইসলামে অর্থ সঞ্চয় করা জায়েজ কি?

পবিত্র কোরআনে অর্থ ব্যয় এবং অপচয়ের ক্ষেত্রে একটি আয়াতে এরশাদ করা হয়েছে, তোমরা আহার করো পান করো, কিন্তু অপচয় করোনা: তিনি (মহান আল্লাহ তায়ালা) অপচয় কারীদের ভালবাসেন না। (এটি উল্লেখিত আছে সূরা আরাফের ৩২ নম্বর আয়াতে)।

অর্থাৎ অর্থ কিংবা সম্পদের অপচয় করা কিংবা কৃপণতা করা দুটোই ইসলামের দ্বারা অনুমোদিত নয়। এই দুইটির মাঝামাঝি অর্থাৎ মিতব্যয়ী হয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করার জন্য ইসলাম শিক্ষা দিয়ে থাকে। যে সকল ব্যক্তিগণ অপচয় এবং কৃপণতা না করে মিতব্যায়িতার সহিত অর্থ ব্যয় করে থাকে তাদেরকে মহান আল্লাহতালা নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এ ব্যাপারে সূরা ফুরকানের ৬৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, মহান রহমানের বান্দা তো তারাই যারা অপব্যায় করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এই দুইয়ের মধ্যবর্তী।

তবে কোন বান্দা যদি সঞ্চয় করে এই ভয়ে যে ভবিষ্যতে এটি তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে তাহলে সেটি নিষিদ্ধ। অর্থ সঞ্চয় কিংবা সম্পদ সঞ্চয় কারো ভবিষ্যৎ জীবনকে নিশ্চয়তা প্রদান করবে এই চিন্তা থেকে কখনোই সেভিংস করা যাবে না। মূল কথা হচ্ছে অর্থ আমাদেরকে কখনোই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে না। যে কোন ধরনের বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। তাই ভবিষ্যতের অনিশ্চিত কোন বিষয়ের জন্য বর্তমানে কোন বিষয় গুলি বাদ দেওয়া ঠিক নয়।

ইসলামে অর্থ উপার্জন ও সঞ্চয়ের মূলনীতি কি

পবিত্র ইসলাম ধর্মে কারো অর্থ উপার্জনের মধ্য সীমা প্রদান করেনি। অর্থাৎ হালাল পন্থায় আপনি যেকোনো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এখানে উল্লেখ যোগ্য বিষয় যে অর্থ উপার্জনের পেছনে এত বেশি সময় ব্যয় করা উচিত নয় যার কারণে আপনি মহান আল্লাহতালা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ থেকে দূরে সরে যান।

আবার সম্পদ ব্যয়েও অপচয় করা যাবে না। সম্পদ খরচ করতে হবে ইসলামের বিধান মত। যার মধ্যে রয়েছে দুনিয়াবী কোন অনুষ্ঠান, বাজে কাজ, বাজে নেশা ইত্যাদি কাজে অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

আবার অনেকেই বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান যেমন জন্মদিন, মুসলমানি ইত্যাদিতে অর্থ ব্যয়কে বেশি উদারতা মনে করে থাকেন। আবার আত্মীয়-স্বজনকে ধার প্রদান করা, উপহার প্রদান করা ইত্যাদির জন্য সঞ্চয় করে থাকেন। এমন চিন্তা থেকে অর্থ সেভিংস করা উচিত নয়।

অর্থ উপার্জনের পর সেখান থেকে প্রতিবেশীর হক, যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি আদায় করার পর আপনি কিছু টাকা অবশ্যই সেভিংস করতে পারেন। আবার চাইলে আপনি সেভিংস না করে মানুষকে ঋণ সহায়তা করতে পারেন কিংবা ব্যবসায় ইনভেস্ট করতে পারেন। এতে করে আপনারা যেভাবে অর্থ সঞ্চয় হয় ঠিক অপর ভাবে অন্যদেরও উপকার হয়।

এ ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পরিণত পরিমাণে ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না। (মুসনাদে আহমদ ৭৩০৩)

এ থেকে আমরা বুঝতে পারি ইসলামের সম্পদ সঞ্চয় করার জায়েজ কিন্তু সেটা কখনোই এমন কোন উদ্দেশ্য নয় যে সেটি আমাকে বিপদ হতে রক্ষা করবে। আর অর্থ উপার্জন এর ক্ষেত্রে অবশ্যই হালাল পন্থা অবলম্বন করতে হবে।। হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জন সঞ্চয় ব্যয় কোন কিছুই আপনার জন্য জায়েজ নেই।