পাখির কারণে বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয় কিভাবে | বার্ড স্ট্রাইক কি

- আপডেট সময় : ০৮:২৯:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৬ বার পড়া হয়েছে
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে বার্ড স্ট্রাইক বা পাখির কারণেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। সবচাইতে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এখন পর্যন্ত ১২০ জন যাত্রী নিহত হবার কথা জানা গিয়েছে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানানো হচ্ছে এই সংখ্যা ১৭৯ জন। তবে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এমনকি উড়োজাহাজে যখন দুর্ঘটনা কবলিত হয় তখনকার সময় বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অগ্নি নির্বাপক সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দুর্ঘটনাস্থল থেকে ১জন যাত্রী এবং ১ জন ক্রুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
এখন বার্ড স্ট্রাইক বা পাখির কারণে বিমান কিভাবে দুর্ঘটনায় পতিত হয় সেটা সম্পর্কে অনেকে আবার জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বার্ড স্ট্রাইক কি
এখানে বার্ড শব্দের অর্থ হল পাখি। অর্থাৎ যখন উড়ন্ত কিংবা দলবদ্ধ কোন পাখি একই সাথে বিমানের বিপরীত দিক থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন এটিকে বলা হয় বার্ডস স্ট্রাইক। এই ধরনের ঘটনার সবচাইতে বেশি করে যখন বিমান, হেলিকপ্টার বা অন্য কোন আকাশযান এয়ারপোর্ট থেকে টেক অফ করে অথবা এয়ারপোর্টে ল্যান্ডিং করে।
বিমান ল্যান্ডিং করার সময় এর উচ্চতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে এবং নিচের দিকে থাকা পাখি গুলোর সাথে ধাক্কা লাগতে পারে। আবার বিমান যখন এয়ারপোর্ট থেকে টেক অফ করে অর্থাৎ উপরের দিকে উঠতে থাকে তখন আকাশে উড়তে থাকে পাখির সাথেও এর ধাক্কা লাগতে পারে।
বার্ড স্ট্রাইক কিভাবে ঘটে কিংবা পাখির কারণে বিমান কি জন্য দুর্ঘটনায় পতিত হয়
আবার যদি কোন পাখি বিমানের ইঞ্জিনে বাড়ি খায় বা ঢুকে যায় তাহলে সেখান থেকে আগুন লেগেও বড় দুর্ঘটনা করতে পারে। এমনকি ছোট একটি পাখির প্রচন্ড দ্রুতগতিতে ছুটে চলা বিমানের কাছের সঙ্গে কিংবা ককপিটের উইন্ড শিল্ডে আঘাত করে তাহলেও বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
বার্ড স্ট্রাইকের কারণ কি কি
বেশিরভাগ এয়ারপোর্ট শহর কিংবা এমন সকল স্থানে অবস্থিত যেখানে পাখির সংখ্যা বেশি। আবার বিমানবন্দরের আশেপাশে এলাকায় অতিরিক্ত জলাশয়, মাটি ইত্যাদি থাকলে পাখিরা সেখানে খাদ্য খুঁজতে আসে কিংবা বাসা বাঁধতে থাকে।
যার কারণে এয়ারপোর্ট এলাকায় বিমান উড্ডয়ন কিংবা নামার উভয়ের ক্ষেত্রেই পাখি খুবই ঝুঁকি পূর্ণ।
একটি বার্ড স্ট্রাইকের কারণে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি যে কতটা ভয়াবহতা নিশ্চয়ই আপনার উপরের খবরটি দেখে বুঝতে পেরেছেন।
এর কারণে শত শত মানুষের জীবন মুহুর্তে ঝুঁকিতে পড়ে যায় এবং আর্থিকভাবেও একটি বিমান অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমন কে যাত্রীবাহী জাহাজ ছাড়া বড় বড় হেলিকপ্টার যুদ্ধ-বিমান এবং অন্যান্য আকাশ যেন এই ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে।
বার্ড স্ট্রাইক প্রতিরোধ করার উপায় বা পাখির আঘাতে বিমান দুর্ঘটনা থেকে বাচার পদ্ধতি
এধরনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
পাখি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ
বিমানবন্দর কিংবা রানওয়ের আশেপাশে উচু ঘাস রাখা কিংবা এমন পরিবেশ তৈরি করা যাতে করে পাখি সেখানে বসতে না পারে। আবার প্রতিটা বিমান উড্ডয়ন কিংবা ল্যান্ড করার সময় শব্দ করে পাখিদের তাড়ানোর মত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
বিমান চলাচলের পরিকল্পিত ব্যবস্থা
যেহেতু এক এক ধরনের পাখি একেক সময় আকাশে ভেসে বেড়ায় কিংবা এদের আচরণ ও ভিন্নতায় অভিবাসন এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে বিমানের রাস্তা নির্ধারণ করা।
রাডার সিস্টেম ব্যবস্থা উন্নত
বিমানবন্দর এলাকার আশেপাশে কোন দিক দিয়ে পাখি চলাচল করছে কিংবা পাখির ঝাঁক রয়েছে সেগুলো সনাক্তকরণে উন্নত মানের রাডার ব্যবহার করা।
বিমান তৈরিতে পরিবর্তন
বিমানের ইঞ্জিন বা কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা যাতে কোন পাখির আঘাতে এটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
২০০৯ সালে নিউইয়র্কে হাডসন নদীতে একটি বার্ড স্ট্রাইকের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ইউএস এয়ারওয়েজ ফ্লাইটের ইঞ্জিনে দুটি পাখি প্রবেশ করে। যদিও ইঞ্জিন পুরোপুরি ভাবে বিকল হয়ে যায় কিন্তু পাইলটের দক্ষতার কারণে সেটি নদীতে অবতরণ করিয়ে যাত্রীদের জীবন বাঁচিয়েছিলো।
যাত্রীবাহী বিমানের পাশাপাশি অন্যান্য মালবাহী কিংবা বিমানে যদি ইঞ্জিনে পাকে ঢুকে পড়াতে হলে সেটা যে ক্ষতি হয় সেটি মেরামত করা বেশ বেসাপেক্ষে।
অন্যান্য অসচেতনতা
কিছু কিছু দেশ এবং এলাকায় বিমানবন্দরে এই ধরনের ঝুড়ি এড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করছে। এমনকি কেউ কেউ রীতিমতো পাখি তারা এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা লোক নিয়োগ করছে। যাতে করে বার্ড স্ট্রাইক বা পাখির কারণে বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হতে না পারে।