দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ সীমিত

- আপডেট সময় : ০৩:২০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ৫৪ বার পড়া হয়েছে
সম্প্রতি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সংখ্যা সীমিত করার বিষয়ে। পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে এই প্রবাল দ্বীপে পর্যটকরা আগামী নভেম্বর মাসে ভ্রমণ করতে পারলেও সেখানে রাত্রি যাপনের জন্য অবস্থান করতে পারবেন না। তবে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে সেখানে গিয়ে থাকতে পারবেন। তবে একই সময়ে ২ হাজারের বেশি পর্যটক অবস্থান করতে পারবেন না। পরবর্তী মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে কোন পর্যটক সেখানে যেতে পারবেন না। উক্ত মাসে দ্বীপ টি সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হবে।
২২ অক্টোবর মঙ্গলবার ২০২৪ তারিখে ঢাকার বেইলি রোডে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য গুলি জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, উল্লেখিত মাস গুলো ছাড়াও বছরের অন্যান্য মাসে নিয়ম কানুন কেমন হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। সাধারণত সেন্টমার্টিন এলাকায় এই সময় গুলোতে পর্যটকদের চাপ বেশি থাকে। যার কারণে এই ৪ মাসের বিষয়ে আপাতত ঘোষণা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সেন্টমার্টিন হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। বাংলাদেশের যত পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যেও সেন্টমার্টিন অন্যতম। সারা বছর ধরে লাগাতার সেন্টমার্টিনে পর্যটন ভ্রমণের কারণে পরিবেশ জীববৈচিত্র অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ, পরিবেশ দূষণ এবং ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের অসচেতনতা। তাদের এই দায়িত্বহীনতার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের এই সম্পদকে বাঁচাতে তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে বারবার।
আমরা জানি সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বজুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা। আবার সাম্প্রতিক সময়ে দ্বীপের লাল কাঁকড়া, ঝিনুক, শৈবাল, শামুক ইত্যাদি জীববৈচিত্র অনেকটাই বিলুপ্তির পথে রয়েছে। এমনকি নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি সেখানকার কোনো স্থাপনা। যেখানে সেখানে পরিবেশের ভালো মন্দ বিচার না করেই গড়ে উঠেছে রিসোর্ট, হোটেল।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ সীমিত করা হচ্ছে
পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে জানা যায়, সেন্টমার্টিনে বর্তমান বসবাসরত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। আর আয়তন হচ্ছে ৮ বর্গ কিলোমিটার। এই ৯ হাজার স্থায়ী বাসিন্দাদের পাশাপাশি আরো সম সংখ্যক মানুষ প্রায় নিয়মিত ভ্রমণ করতে যায় এই দ্বীপে। তাইতো দ্রুত এ সংখ্যা কমানো না গেলে ভবিষ্যতে জিবি বৈচিত্র আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করেন পরিবেশবাদীরা। এমনকি আস্তে আস্তে সেটি সমুদ্রের পানিতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলেও আর সন্দেহ করছেন তারা।
এদিকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত ও রাত্রি যাপনে বিধি নিষেধ আরোপ করায় হাজার হাজার জনতা গণমিছিল করছেন। তাদের ভাষ্যমতে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করা হলে পরবর্তীতে আরো কঠোর বিক্ষোভ কর্মসূচি দিবেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মানব বন্ধনের একজন ছাত্রনেতা সাংবাদিকদের কে জানান, দ্বীপের প্রায় ৮০% মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করে এই সকল পর্যটনদের উপর। পরিবেশের ক্ষতি প্রতিরোধ এবং ভারসাম্য রক্ষার্থে আমরা কাজ করব। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের এধরনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার দাবি তা জানিয়েছে তারা। কারণ তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে জীবিকা নির্বাহ, সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এবং বাড়তে পারে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
বাংলাদেশের এই প্রবাল দ্বীপে সারা পৃথিবী হতে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ আসেন ভ্রমণ করতে। কক্সবাজারের পাশাপাশি এটিও সমানভাবে ভ্রমন প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখানে থেকে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি। দেশের এমন কোন মানুষ নেই যারা কখনো এখানে গিয়েছে বা যেতে ইচ্ছা পোষণ করেনি। সারা বছরের তুলনায় সাধারণত শীতের সময় অর্থাৎ ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির দিকে ভ্রমণকারীদের চাপ বেশি থাকে। কারণ একটু ঠান্ডা আবহাওয়ায় সমুদ্রের পরিবেশ অনেক বেশি উপভোগ্য থাকে। এ সময়ে প্রকৃতির নানা রকম বৈচিত্র মনকে ভালো করে দেয়।
শুধুমাত্র ন্যাচারাল পরিবেশই নয় বরং উপভোগ করা যায় নানা রকম সামুদ্রিক খাবার। বলতে পারেন প্রকৃতি প্রেমী এবং ভোজনরসিক উভয়ের জন্যই আদর্শ জায়গা হচ্ছে কক্সবাজার এবং এই দ্বীপ। তবে আগামী সময় গুলোতে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার উদ্যোগ গ্রহণে অনেকটাই চাপ কমবে সেখানকার পরিবেশের উপর।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানালেন শিক্ষার্থীদের পুলিশে পার্টটাইম নিয়োগ দেয়া হবে। বিস্তারিত জানতে এখানে প্রবেশ করুন।